Mashroof Hossain created this document
(বিঃদ্রঃ লেখাটি ৩১তম বিসিএস লিখিত
পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সরাসরি কোন
কাজে আসবেনা,আপনারা চাইলে এটি এড়িয়ে যেতে
পারেন)
ক্যাডার পছন্দঃ পুলিশ
শুরুর কথাঃ
প্রিয় সদস্যবৃন্দ,
১) বিসিএস পরীক্ষার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয় হচ্ছে ক্যাডার পছন্দক্রম-এ
কথা মোটামুটি পরীক্ষার্থীমাত্রই স্বীকার করবেন।
আমরা সবাই সরকারি চাকুরিতে আসার
পেছনে দেশসেবা,সামাজিক
প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি অবশ্যম্ভাবী কারণগুলোর
পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় চিন্তা করি।কেউ কেউ
পছন্দ করি দেশ-বিদেশে ভ্রমন এবং আন্তর্জাতিক
মানের জীবনযাত্রা,তাঁদের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র
ক্যাডার হয়ে দাঁড়ায় প্রথম পছন্দ।কেউ বা দেশের
নীতিনির্ধারণে সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার
কথা চিন্তা করি-প্রশাসন ক্যাডার
সেক্ষেত্রে পছন্দক্রমের শুরুতেই চলে আসে।
কারো কারো ক্ষেত্রে আবার ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু
চ্যালেঞ্জিং জীবনযাত্রার হাতছানি অগ্রাহ্য
করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়-সেক্ষেত্রে পুলিশ ক্যাডার
তুলে দিই পছন্দক্রমের শীর্ষে।
২) আমরা প্রতিটি মানুষ একেকটি ভিন্ন ভিন্ন
সত্তা,আমাদের পছন্দ-অপছন্দগুলোও তাই প্রায়
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র।বাংলাদেশ সিভিল
সার্ভিসের যে ২৮টি ক্যাডার রয়েছে তাদের
প্রত্যেকটিরই নিজস্ব কিছু সুযোগ-
সুবিধা রয়েছে যেগুলোর একটির সাথে অন্যটির
তুলনা করা যাবেনা।যেমনঃ পররাষ্ট্র
ক্যাডারে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের জীবনযাত্রার
সুযোগ যেটি পুলিশ বা এ্যাডমিন
ক্যাডারে সেরকমভাবে পাওয়া যাবেনা।আবার একজন
পুলিশ বা এ্যাডমিন ক্যাডার দেশের একেবারে তৃণমূল
পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কাজ করার যে সুযোগ
পেয়ে থাকেন তা পররাষ্ট্র ক্যাডারে অনুপস্থিত।
এছাড়া কাস্টমস,অডিট,ইকোনমিক,ট্যাক্সসহ
অন্যান্য ক্যাডারগুলোতেও একই রকম স্বতন্ত্র
সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
৩) একটি স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক
হিসেবে আপনি যখন ক্যাডার পছন্দক্রমের
কথা চিন্তা করবেন তখন আপনার চিন্তা করা উচিত
আপনার জন্যে কোন
ক্যাডারটি সবচাইতে বেশি উপযুক্ত।
যে ক্যাডারে যোগ দিলে আপনার
প্রতিভা সবচাইতে বেশি বিকশিত
হবে এবং সবচেয়ে দক্ষভাবে আপনি দেশসেবা করতে
পারবেন বলে মনে করেন,আপনার প্রথম পছন্দ
হওয়া উচিত সেটিই।“আমি সেই ক্যাডারেই যোগ দেব
যেটি বাকি সব ক্যাডারের উপর কর্তৃত্ব করে”
অথবা “অমুক ক্যাডার সবচাইতে ক্ষমতাবান”-
এধরণের চিন্তাধারা শুধুমাত্র কলোনিয়াল
এবং অগণতান্ত্রিকই নয়,কোন কোন
ক্ষেত্রে তা আপনাকে সবার সামনে হাসির খোরাকও
বানিয়ে দিতে পারে।
৪) বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল একটি দেশে একজন
পাবলিক সারভেন্ট নিজেকে পাবলিক “সারভেন্ট”
হিসেবে ভাববেন এবং সেই অনুসারে কাজ করবেন-এই
আশাতেই কিন্তু দেশের গরীব মানুষের
টাকা থেকে তাকে নানারকম সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।
নিজেকে পাবলিক “সারভেন্ট” না ভেবে “মাস্টার”
বা প্রভু ভাবা শুরু করলে একদিকে তা যেমন পাবলিক
সার্ভিসের মূল লক্ষ্যের
বিচ্যুতি ঘটায়,আরেকদিকে তা পতনকেও ত্বরান্বিত
করে।বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ অর্থাৎ ফর্ম
পূরণের সময় থেকেই এ বিষয়টি আপনার
চিন্তাচেতনার সর্বগভীর স্তরে প্রোথিত
হওয়া প্রয়োজন।
৫) আমরা বিসিএস পরীক্ষার্থীরা অনেক সময়
ভালোভাবে না জেনেই মানুষের মুখের
কথা শুনে নানারকম ক্যাডার নিজের
প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় পছন্দ হিসেবে দিয়ে ফেলি।
পরবর্তীতে দেখা যায় নিজের পছন্দমত
ক্যাডারে যোগদান করার পর মোহভংগ ঘটে,নানারকম
হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়।অথচ ফর্ম পূরণের সময়
আরেকটু বিচার বিবেচনা করে ক্যাডার পছন্দক্রম
প্রদান করলে এটি এড়ানো যেত;আপনি আপনার
জন্যে মানানসই ক্যাডার পেতেন আবার আপনার
জায়গায় ওই ক্যাডারে হয়তো এমন কেউ আসতেন
যার জন্যে সেটি যথোপযুক্ত হত।
৬) আমাদের এ গ্রুপে নানান ক্যাডারে কর্মরত অনেক
সম্মানিত সদস্য রয়েছেন।আমরা যদি নিজ নিজ
ক্যাডারের ভালোমন্দ সম্পর্কে এখানকার বিসিএস
পরীক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক একটা ধারণাও
দিতে পারি, সেটিও মনে হয় সঠিক ক্যাডার
নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অন্ততঃ একজন পরীক্ষার্থীও যদি এই
লেখাগুলো পড়ে সঠিক সার্ভিসে যোগদান করেন-
সেটিই বা কম কি?সে নিজে যেমন
উৎফুল্লভাবে জীবনের অন্ততঃ ২৫-৩০ বৎসর কাজ
করতে পারবে,দেশও পাবে একজন স্বতঃস্ফূর্ত
সেবক।আর এ উদ্দেশ্য থেকেই এ লেখার
সুত্রপাত,এটিকে দয়া করে কেউ পুলিশ ক্যাডারের
বিজ্ঞাপন বলে ভেবে নেবেন না।
৭) মূল প্রসঙ্গে যাবার
আগে সবিনয়ে একটি অনুরোধ করি।আপনার উদ্দেশ্য
যদি এরকম হয়-
“আরে আমার চাই ক্ষমতা আর অঢেল টাকাপয়সা
দুটোই,একবার ঢুকতে পারলে পাঁচ বছরেই চৌদ্দ
পুরুষের গতি করে ফেলব ইনশা-আল্লাহ”
….তাহলে দয়া করে সব ধরণের সরকারী চাকুরি থেকেই
দূরে থাকুন।আমাদের দেশ ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার
দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দয়া করে অন্য
দেশগুলোকেও এই বিরল “সম্মানের” অধিকারী হবার
সুযোগ দিন!
পুলিশ ক্যাডারের ভালো-মন্দঃ
আপনারা যাঁরা পুলিশ
সার্ভিসে যোগদানে আগ্রহী,তাঁরা এই সার্ভিসের
বিভিন্ন দিক নিয়ে আগ্রহী হবেন-এটাই স্বাভাবিক।
চলুন শুরুতেই এর অনুজ্জ্বল দিকগুলো দেখা যাকঃ
১) ভাবমূর্তি সংকট(Image crisis): পত্র-পত্রিকায়
বিভিন্ন অসৎ পুলিশের কর্মকান্ড
আমরা মোটামুটি প্রতিদিনই দেখতে পাই।“পুলিশ” নাম
শুনলেই সাধারণ জনগণের
সামনে যে মূর্তিটি ভেসে ওঠে তা কিন্তু মোটেই
সুখকর নয়।কাজেই,পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করামাত্র
আপনাকে আপনার সার্ভিসের কুলাঙ্গারদের
কৃতকর্মের দায়ভার বহন
করতে হবে,এটা মোটামুটি নিশ্চিত থাকুন।ইউনিফর্ম
চাকুরির এটি একটি খারাপ দিকঃ অন্যান্য
চাকুরিতে কোন ব্যক্তি অপকর্ম করলে তার দায়
বর্তায় ওই ব্যক্তির উপর,কিন্তু ইউনিফর্মধারী কেউ
সেই একই অপকর্ম করলে তার দায়
পড়ে গোটা সার্ভিসের উপরেই।মজার ব্যাপার
হচ্ছে,ইউনিফর্ম পরে আপনি যখন কোন ভালো কাজ
করবেন তখন কিন্তু কেউ
পুরো সার্ভিসকে বাহবা দেবেনা।এর
জন্যে আসলে কাউকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।বিগত
২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন
এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন-মোটামুটি গত
আড়াইশ বৎসর ধরে এই পুলিশ বাহিনী ব্যবহৃত
হয়েছে সাধারণ মানুষকে দমিয়ে রাখতে।আড়াইশ বছর
ধরে যে ট্রেডিশন গড়ে উঠেছে তা রাতারাতি দূর
হবে এমনটি আশা করা অনুচিত।আপনি যত
ভালো মানুষই হয়ে থাকেননা কেন,পুলিশ
বাহিনীতে যোগদান করার পর মানুষ
আপনাকে বাঁকা চোখে দেখবে-এটি শুরুতেই
জেনে নিন।
২) কর্কশ কাজের পরিবেশ(Harsh working
environment): পুলিশের চাকুরিতে আপনার দিন শুরু
হবে খুনের সংবাদ নিয়ে,লাঞ্চ করবেন রায়টের
খবরের সাথে, বৈকালিক নাস্তার সময় শুনবেন
ধর্ষণের মামলার কথা,ডিনারের সময় ডাকাতির খবর
আর রাত ৪টায় ঘুম ভাংবে থানার ওসির ফোনের
শব্দে-“স্যার, ওমুক জায়গায় সশস্ত্র দস্যুরা ৫
জনকে হত্যা করে মালামাল লুট করেছে-শিগগির
আসুন”।সমাজের অন্ধকার দিকটার সাথে আপনার
পরিচয় হবে ওতপ্রোতভাবে।মনে রাখবেন,এটি কোন
হোয়াইট কলার চাকুরি নয় যে আপনি ৯টা-৫টা স্যূট
টাই পরে অফিসে গেলেন এবং ফিরে এসে পরিবারের
সাথে সময় কাটালেন।আপনার কাজের সামান্য
বিচ্যুতিতে টলে উঠতে পারে সরকারের
আসন,হতে পারে ভয়াবহ প্রাণহানি।এই কর্কশ
পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন
কিনা ক্যাডার পছন্দক্রমে পুলিশ রাখার আগে বার
বার ভেবে দেখুন।
৩)ব্যক্তিগত সময়ের অভাব(Lack of personal
time): আমার কাছে পুলিশের চাকুরির
এটি সবচাইতে কঠিন দিক বলে মনে হয়।
পুলিশিং একটি ২৪/৭ চাকুরি-এর যুদ্ধকাল
বা শান্তিকাল বলে কিছু নেই-Cops are always in
the line of fire.এমনও হবে যখন আপনি নিজের
অতি নিকটাত্মীয়ের বিয়েতে যোগ
দিতে পারবেননা,খুব কাছের কেউ মারা গেলেও শেষ
দেখাটি দেখতে পারবেননা।সারাদিন ব্যস্ততার পর
অফিস থেকে এসে সবেমাত্র নিজের ছোট
মেয়েটিকে কোলে নিয়েছেন,এমন সময় দায়িত্বের
আহবানে সাড়া দিতে আপনাকে ছুটে যেতে হবে দূর-
দুরান্তের কোন অপরাধের ঘটনাস্থলে।দিন নেই,রাত
নেই,ঈদ নেই,পহেলা বৈশাখ নেই,বিশ্বকাপ নেই-
পুরোটা সময় আপনি থাকবেন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে।
কদিন আগে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সারাদেশ যখন
আনন্দে মেতে উঠছে-পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের তখন
ছুটতে হয়েছে ভেন্যু নিরাপত্তায়।হরতালের সময়
পুরো অফিসপাড়ায় যখন ছুটির আমেজ,আপনার তখন
রায়ট গিয়ার পরে মিছিলের সাথে থাকতে হবে।আর
এরকমটি একদিন নয়,দুদিন নয়,মাসের পর মাস,বছরের
পর বছর চলবে-যতদিন আপনি মোটামুটি সিনিয়র
পর্যায়ে না যান।কাজেই,নিজেকে ভালোভাবে প্রশ্ন
করুন এই জীবন আপনি চান কি-না।
৪)সীমিত সম্পদ এবং জনবল(Limited resources
and manpower): সারদাতে “ট্রেনিং অফ
ট্রেইনারস” নামের একটি ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষন
দিতে এফবিআই(FBI)এবং আমেরিকার বিভিন্ন
স্টেটের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে রিটায়ার্ড পুলিশ
অফিসাররা এসেছিলেন।এদের একজন,সিয়াটল পুলিশ
ডিপার্টমেন্টের শেরিফ জনাব স্টিভেনসের
সাথে আমার কিছুদিন কথা হয়েছিলো।এই ভদ্রলোক
খুব মজার একটা কথা বলেছিলেন আমাকে-“
দেখো মাসরুফ,বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্য
হিসেবে তোমাদের খুব গর্বিত হওয়া উচিত।যেরকম
ভয়াবহ চাপ এবং সীমাবদ্ধ রিসোর্স
নিয়ে তোমরা কাজ করছ-আমাদেরকে এরকম
পরিবেশে কাজ করতে হলে তোমাদের সিকিভাগ
সার্ভিসও আমরা দিতে পারতাম কিনা সন্দেহ”।
এটি একটি নির্মম সত্য-যেসব সীমাবদ্ধতার
মধ্যে থেকে বাংলাদেশের পুলিশকে কাজ করতে হয়
তা প্রায় কল্পনাতীত।উদাহরণ হিসেবে পুলিশ-পিপল
রেশিওর দিকে তাকানো যেতে পারে।বাংলাদেশে প্রায়
১২০০ জন মানুষের জন্যে রয়েছে মাত্র একজন
পুলিশ,যেখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে প্রায় ৭০০
জনের জন্যে একজন পুলিশ বরাদ্দ।
অর্থাৎ,যদি ভারতের মানেও
আমরা পৌঁছতে চাই,সেক্ষেত্রেও পুলিশের জনবল
প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে।অসৎ পুলিশ অফিসারদের
বিত্ত-বৈভবের কথা আমরা পত্রিকায় প্রায়ই
দেখতে পাই,কিন্তু এটা খন্ডিত চিত্রমাত্র।
কখনো সুযোগ হলে এলাকার পুলিশ
ব্যারাকগুলো একবার ঘুরে দেখতে পারেন,দেখবেন
কি অমানবিক অবস্থায় সাধারণ পুলিশ
সদস্যরা জীবনযাপন করে।গরীব দেশ,যা সম্পদ
আছে তাতে এর চাইতে বেশি দেবার সামর্থ্যও নেই।
দেড় লাখ সদস্যবিশিষ্ট এই বাহিনীতে বিসিএস
অফিসার মাত্র দুহাজার,বাকিরা সবাই কন্সটেবল
থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পদে নিয়োজিত।পুলিশ
বাহিনীতে দুর্নীতিবাজদের অস্তিত্ব এবং কোনও
কোনও ক্ষেত্রে প্রতিপত্তির কথা আমরা সবাই
জানি।কিন্তু জনগণকে একটা মোটামুটি মানের
সার্ভিস দিতেও যে অবকাঠামোগত
সহায়তা প্রয়োজন,আমাদের এই গরীব দেশ প্রায়শঃই
তা সরবরাহ করতে পেরে ওঠেনা।কর্তব্য
করতে গিয়ে হাজারটা বাধার সম্মুক্ষীন হবেন
এবং লড়াইটা অধিকাংশ সময়ে একাই করতে হবে-
পুলিশ প্রথম পছন্দ দেবার আগে এটি অবশ্যই মাথায়
রাখুন।
৫)কঠোর শারীরিক প্রশিক্ষণ(Rigorous Physical
Training): পুলিশ ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত
হবার পর এক বৎসর আপনাকে বাংলাদেশ পুলিশ
একাডেমী,সারদায় মৌলিক প্রশিক্ষণ
নিতে হবে।“সারদার ঘোড়াও
দুর্নীতি করে,পয়সা দিলেই সব ঠিক” জাতীয়
আজগুবি কথাবার্তায় কান না দিয়ে মনে রাখবেন, এই
প্রশিক্ষণটি যথেষ্ট কঠিন।ঘোড়ায় চড়া,এগারো ফিট
উঁচু দেয়াল লাফিয়ে পার হওয়া(surmounting wall)
ইত্যাদির
জন্যে এখানে শারীরিকভাবে আপনাকে তৈরি করে
নেয়া হবে।এই তৈরি করার পদ্ধতিটি যথেষ্ট
কষ্টসাধ্য,ভোর চারটায়
উঠে আপনাকে দৌড়াতে হবে পিটি গ্রাউন্ডে,দৈনিক
মোটামুটি পাঁচ কিলোমিটার পথ দৌড়ে পার হতে হবে।
এছাড়া প্যারেড,অবস্টাকলস,মার্শাল
আর্ট,ফায়ারিং ইত্যাদি তো আছেই।
আপনি যদি মনে করেন আউটডোর ট্রেনিং আপনার
জন্যে নয়-তাহলে পুলিশে না আসাই ভালো।
৬)প্রতিকুল সামাজিক পরিবেশ(Adverse social
environment): একটি সমাজে পুলিশ বাহিনী গঠনের
উদ্দেশ্য মোটামুটি এরকমঃ সমাজের শতকরা নব্বই
ভাগ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আইন
মেনে চলবে;মাত্র দশ ভাগ মানুষ
হবে বিপথগামী এবং পুলিশ তাদেরকে নিয়ন্ত্রন ও
দমন করবে।হলিউডের Righteous Kill
সিনেমাটিতে পুলিশ অফিসারের
চরিত্রে অভিনয়কারী রবার্ট ডি নিরোর একটি সংলাপ
এখানে প্রনিধানযোগ্য -“Our job is to protect 90
percent people of the society from the rest 10
percent”.
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর
দিকে আমরা যদি তাকাই-আসলেই কি নব্বইভাগ মানুষ
আইন মেনে চলে,বা চলার মত পরিবেশ
এখানে রয়েছে?একটি ছোট উদাহরণ
এখানে টানা যেতে পারে।রাস্তায় দুটি প্রাইভেট
গাড়ির মধ্যে ছোটখাটো ধাক্কা লাগলে যার
দোষে ধাক্কা লেগেছে সে কি বের
হয়ে এসে ক্ষমা চায় আমাদের দেশে? বরং দুই পক্ষ
গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় নামে এবং কার পরিচিত কোন
প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে তা নিয়ে গলাবাজি শুরু
করে দেয়।
সাবেক আইপিএস অফিসার নটরাজনের ভাষায়, একটি
দেশের পুলিশ বাহিনী সেদেশের মানুষের চমৎকার একটি
প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করে।যেদেশের মানুষ
যেরকম,সেদেশের পুলিশ বাহিনীও ওরকমই হয়-তারা
কেউ আকাশ থেকে আসেনা।
এরকম একটি দেশে পুলিশের চাকুরি করা খুবই কঠিন
কাজ।আপনি ন্যায়,অন্যায় যা-ই করুন না কেন
আপনার শতকরা পঞ্চাশভাগ ক্লায়েন্ট সবসময়
আপনার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।আপনার কাজ
যদি আপনি ঠিকভাবে করেন
তাহলে অন্যায়কারী পক্ষের লোকেরা আপনার
কুৎসা গাইবে,আর অন্যায়ভাবে করলে হবে তার
উল্টোটা।যে কোন ক্ষেত্রেই পুলিশ হচ্ছে সবার
প্রিয় “ভিলেইন”।জওহরলাল নেহরু তাঁর
একটি পার্লামেন্টারি ভাষণে বলেছিলেন -“একটি
জঙ্গী মিছিলে যে লোকটি ইঁট দিয়ে পুলিশের মাথা
ফাটালো সে হয়ে যায় নায়ক,মিডিয়াতে তাকে নিয়ে
মাতামাতি শুরু হয়ে যায়।কিন্তু যে গরীব কন্সটেবলটি
তার কর্তব্য করতে গিয়ে আহত হল-তার খোঁজ
কাকপক্ষীতেও নেয়না”।
এর মানে এই নয় যে পুলিশের লোকেরা অন্যায়
করেনা।বাকি সব সার্ভিসের মতই এখানেও দুষ্টলোক
আছে যারা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে।কিন্তু
যারা এরকম নয়,তাদের পক্ষেও আপনি কাউকেই
পাবেননা।পুলিশ সার্জেন্ট দশটাকা ঘুষ
খেলে যতটা শোরগোল হয়,স্যুট-টাই পরা বড় বড়
হোয়াইট কলার অপরাধীরা কলমের খোঁচায় দশ
কোটি টাকা আত্মসাৎ করলে তার সিকিভাগও হয়না।
বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই হোয়াইট কলার
অপরাধীরাই আপনার দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে
-“পুলিশ খারাপ,বাংলাদেশে পুলিশের কোনও দরকার
নেই” ।এরকম পরিস্থিতিতে আপনার একমাত্র জবাব
হতে পারে কবিগুরুর দু-চরণঃ
“আমি শুনে হাসি,আঁখিজলে ভাসি,এই ছিলো মোর
ঘটে,
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,আমি আজ চোর বটে!”
পুলিশ ক্যাডার প্রথম পছন্দ দেবার আগে উপরের
দুলাইন ভালোভাবে মুখস্ত করে নিন,
মোটামুটি নিয়মিতই আপনাকে এটি ব্যবহার
করতে হবে!
এতক্ষণ অনুজ্জ্বল
দিকগুলো মোটামুটি তুলে ধরলাম-এপর্যন্ত
যাঁরা পড়েছেন,সম্ভবত আপনাদের পুলিশ হবার শখ
মিটে গিয়েছে।দাঁড়ান!খারাপ দিকগুলো যখন জানলেন
এবার ভালো দিকগুলোও কিছুটা শুনে তারপর
সিদ্ধান্ত নিন,কেমন?
১)সামাজিক নিরাপত্তাঃ আপনি পুলিশে যোগদান
করার পর দেখবেন আপনার সব আত্মীয়ের ভেতরেই
একটা অন্যরকম আত্মবিশ্বাস কাজ করছে।আমাদের
সমাজে দুষ্টলোকের অভাব নেই।এই দুষ্টলোকের দল
যদি জানে যে আপনি পুলিশ,আপনার
সাথে ঝামেলা করার আগে দশবার ভাববে।বাংলাদেশের
মত দেশে আমার মনে হয় এটি একটি বিশাল সুবিধা।
আশা করি এমন দিন আসবে যেদিন নিরাপত্তার
জন্যে কারো পুলিশ আত্মীয়
থাকা লাগবেনা,প্রতিটি মানুষই পুলিশের কাছে যথাযথ
নিরাপত্তা পাবে।কিন্তু যতদিন এটি না হচ্ছে,আপনার
পুলিশ হওয়া আপনার গোটা পরিবারের
জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ।
২)আর্থিক নিরাপত্তাঃ আমার পুলিশে যোগদানের
পেছনে এটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ
করেছে,যে কারণে আমি ফরেন সার্ভিসের পরেই অন্য
ক্যাডারের বদলে পুলিশ পছন্দ দিয়েছিলাম।সিভিল
সার্ভিসগুলোর মধ্যে পুলিশেই একমাত্র সব বিসিএস
অফিসারের পক্ষে ইউএন মিশনে যাওয়া সম্ভব।ইউএন
মিশন দুপ্রকারঃ ফর্মড পুলিশ ইউনিট(এফপিইউ)
এবং সিভিলিয়ান পুলিশ(সিভপোল)।এফপিইউ
মিশনে গেলে এক বৎসরে আপনি আয় করবেন ২০
লক্ষ টাকা,আর সিভপোলে গেলে এর দ্বিগুণ অর্থাৎ
৪০ লক্ষ টাকা।মোটামুটি তিনটি মিশন করার সুযোগ
সবাই পায়-এবার হিসেব করুন সম্পূর্ণ হালাল
উপায়ে কত টাকা আপনি উপার্জন করতে পারছেন।
এক্ষেত্রে আরেকটি তথ্য সংযোজন
করা যেতে পারে,বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসের
(আর্মি,নেভী,এয়ারফোর্স) সদস্যদের ক্ষেত্রেও
মিশন থেকে আয় এতটা নয়।বাংলাদেশের সিভিল
সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের যে বেতন
তাতে পরিবার নিয়ে সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দে চলা খুবই
কঠিন।যে কয়টি ক্যাডার এর ব্যতিক্রম,এর
মধ্যে পুলিশ সর্বপ্রথমে আসবে।সৎভাবে এত অল্প
সময়ে এই পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সুযোগ
একমাত্র পুলিশ ক্যাডারেই রয়েছে।মিশন ছাড়াও
পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যোগ্যতা অনুযায়ী ইউএন
এর বিভিন্ন উচ্চপদে নিয়োজিত হন-
সেক্ষেত্রে বেতনটা প্রায় অবিশ্বাস্য
পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে।
৩)অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাঃ একজন
এএসপি প্রশিক্ষণ শেষ হবার সাথে সাথেই শুধুমাত্র
তাঁর জন্যে বরাদ্দ
হিসেবে বাড়ী,গাড়ী,ড্রাইভার,বডিগার্ড
ইত্যাদি পেয়ে থাকেন যদি তিনি কোন সার্কেল
বা জোনে পোস্টিং পান।এছাড়া অন্যান্য
যে জায়গাতেই পোস্টিং হোক
না কেন,থাকা এবং যাতায়াতের
সুবিধা তাঁকে সরকারীভাবে প্রদান করা হয়।চাকুরির শুরু
থেকেই এরকম অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা পুলিশ
ক্যাডারের একটি অন্যতম ভালো দিক।
৪)বিদেশে প্রশিক্ষণ এবং ভ্রমনঃ পুলিশ ক্যাডারের
সদস্যরা আমেরিকার এফবিআই,ইতালির
কারাবিনিয়ারি,ইংল্যান্ডের স্কটল্যান্ড
ইয়ার্ড,মালয়েশিয়ার রয়াল পুলিশসহ পৃথিবীর
মোটামুটি অধিকাংশ উন্নত দেশের আইন-
শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ
পেয়ে থাকেন।চাকুরির সুবাদে প্রায় প্রতিটি সিনিয়র
অফিসারই বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলো ভ্রমন
করেন।ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত এফবিআই একাডেমীর
সরাসরি গ্র্যাজুয়েট হবার সুযোগ বাংলাদেশ পুলিশ
ক্যাডারের একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় দিক।
৫)উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগঃ পুলিশ
ক্যাডারে নির্বাচিত হবার পর সারদায় এক বৎসর
প্রশিক্ষণ শেষে আপনি বেসিক
ট্রেনিং সার্টিফিকেটের
পাশাপাশি আরেকটি সার্টিফিকেট
পাবেনঃরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার
অফ পুলিশ সায়েন্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট।
কাজেই,আপনি যে বিষয়েই মাস্টার্স করুন না কেন এই
ডিগ্রিটি আপনার ক্যারিয়ারে একটি উল্লেখযোগ্য
সংযোজন।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
চাকুরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে এই ডিগ্রিটি আপনার
বেশ কাজে আসবে।এছাড়া বাংলাদেশ সিভিল
সার্ভিসের সদস্য হিসেবে আপনি বিশ্বের যে কোন
দেশে মাস্টার্সের জন্যে যোগ্যতার
ভিত্তিতে স্কলারশিপ পাবেন।বিশেষ
করে জাপান,অস্ট্রেলিয়া,ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার
বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আপনি পড়তে চান,সে পথ
আপনার জন্যে খুবই সুগম।আপনি যদি এমনকী পাঁচ
বছরের ছুটি নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন
করতে চান সেই সুযোগও আপনাকে পুলিশ বিভাগ
করে দেবে।বর্তমানে পুলিশিংকে ধরা হয়
একটি আন্তর্জাতিক পেশা হিসেবে,এ
কারণে বাইরে পড়াশোনা করাটাকে এ বিভাগে বেশ
গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।“পুলিশ হওয়া মানেই
পড়াশোনার ইতি ঘটা”-প্রচলিত এই ধারণা সম্পূর্ণ
ভুল।
৬)মেয়েদের অগ্রাধিকারঃ পুলিশ সার্ভিসে মেয়েদের
বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে।
যেমনঃইউএন মিশনগুলোতে নারী অফিসাররা পুরুষ
অফিসারদের চাইতে আগে যাওয়ার সুযোগ
পেয়ে থাকেন।পোস্টিং-এর ক্ষেত্রেও নারী পুলিশ
অফিসারদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার
ক্ষেত্রে নারী অফিসারদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী পুলিশ অফিসারদের
জন্যে প্রচুর ঈর্ষনীয়
চাকুরি রয়েছে যেগুলো তাঁরা অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে পেয়ে থাকেন।
৭)আন্তঃবাহিনী পর্যায়ে কাজ করার সুযোগঃ
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স(SSF) অর্থাৎ
ভিআইপিদের(প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী) বিশেষ
নিরাপত্তা বাহিনীতে পুলিশ
অফিসাররা প্রতিরক্ষা অফিসারদের
সাথে একত্রে কাজ করতে পারেন।এর
ফলে একদিকে যেমন তাঁদের পেশাগত
দক্ষতা বৃদ্ধি পায়,অন্যদিকে তাঁরা এই এলিট বাহিনীর
বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
এছাড়া অনেকেই জানেন না যে রেপিড একশন
ব্যাটালিয়ন(RAB)একটি পুলিশ ইউনিট যার প্রধান
এডিশনাল আইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ
অফিসার।এখানেও পুলিশ
অফিসাররা আন্তঃবাহিনী পর্যায়ে কাজের সুযোগ
পেয়ে থাকেন।
৮)পদোন্নতি এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতঃ কিছুদিন
আগেই মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী এএসপি থেকে আইজি পদমর্যাদার
৬৭৩টি নতুন পদ সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন যা খুব
শিঘ্রি কার্যকর হবার পথে রয়েছে।এছাড়া “পুলিশ
ন্যাশনাল ব্যুরো ফর কাউন্টার টেররিজম”,”পুলিশ
ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন” ইত্যাদি নতুন নতুন
পুলিশ ইউনিটও সৃষ্টি হবার পথে।আইজি পদমর্যাদার
দশটি পদ সৃষ্টি হওয়া,লেফটেন্যান্ট জেনারেলের
পদমর্যাদার “চিফ অফ পুলিশ” পদ সৃষ্টি-এগুলোও
বর্তমানে সময়ের ব্যাপার মাত্র।বাংলাদেশের পুলিশের
জনবল প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই
অপ্রতুল,তাই সরকার এই সার্ভিসের প্রসারণ
এবং উন্নতিতে বদ্ধপরিকর।এ কারণে পুলিশ সার্ভিস
ক্যারিয়ার হিসেবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি পথ।
৯)অন্যত্র কাজ করার সুযোগঃ পুলিশে চাকুরি করেন
বলে যে অন্য কোথাও আপনি কাজ
করতে পারবেননা এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে অন্যান্য
ক্যাডারের মত আপনি যে কোন
মন্ত্রনালয়ে ডেপুটেশনে কাজ করতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ,বর্তমানে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ
দূতাবাসে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে একজন
সিনিয়র পুলিশ অফিসার কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়া মরক্কোর এম্বাসাডর হিসেবে সাবেক
আইজিপি নূর মোহাম্মদ স্যার কাজ করছেন।এই
অল্প কদিন আগেই পার্বত্য চট্যগ্রাম বিষয়ক
সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এডিশনাল
আইজিপি নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা স্যার।পুলিশ
সার্ভিসে দশ বছর চাকুরি করার পর
আপনি যদি দেখেন যে এ সার্ভিস আপনার
ভালো লাগছেনা,সেক্ষেত্রে ৩০% অন্য সার্ভিসের
কোটায় আপনি পুলিশ
থেকে সেক্রেটারিয়েটে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে
স্থায়ীভাবে চলে যেতে পারবেন।সেক্ষেত্রে আপনার
সিরিয়াল হবে পিএসসির সিরিয়াল অনুযায়ী-
আপনাকে অন্য ক্যাডারের আপনার ব্যাচমেটদের
সবার পেছনে পড়তে হবেনা।
এছাড়া এনএসআই,পাসপোর্ট অথরিটি,মাদক
অধিদপ্তর ইত্যাদি জায়গায় আপনি উচ্চপদে কাজ
করতে পারবেন।আর দেশের
বাইরে ডেপুটেশনে আপনি ইন্টারপোল,ইউএন
পুলিশ,ইউএন হেডকোয়ার্টার্স
ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ
করতে পারবেন।
১০)বৈচিত্রময় কাজের সুযোগঃ মূলধারার
পুলিশিং যদি আপনার
ভালো না লাগে সেক্ষেত্রে পুলিশে বিভিন্ন
বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে যেখানে আপনি কাজ
করতে পারবেন।যেমনঃডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ,স্পেশাল
ব্রাঞ্চ,সিআইডি ইত্যাদি।পুলিশের বিশেষায়িত
কমান্ডো ইউনিট সোয়াট(SWAT-Special Weapond
And Tactics), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন
(সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটের
আদলে গড়ে তোলা বিশেষ পুলিশ
বাহিনী),রেলওয়ে পুলিশ,টুরিজম পুলিশ
প্রভৃতি বিচিত্র ধরণের পুলিশ ইউনিটে কাজ করার
সুযোগ আপনাকে একঘেয়েমি থেকে রক্ষা করবে।
১১) অবাধ বিচরণঃ একজন পুলিশ অফিসার
হিসেবে বস্তি থেকে রাজপ্রাসাদ-সব জায়গায়
আপনার অবাধ বিচরণের সুযোগ রয়েছে।আপনার
উপর যে ক্ষমতা ন্যস্ত
করা হয়েছে তা দিয়ে আপনি সমাজের তৃণমূল
থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ নাগরিক-সবারই
সরাসরি উপকার করতে পারবেন।আপনার সৎকর্মের
সুফল দেশের জনগন তাৎক্ষণিকভাবে পাবে-
যা আপনাকে অপরিসীম মানসিক তৃপ্তি এবং সম্মান
এনে দেবে।
১২) গৌরবময় ঐতিহ্যঃ ১৯৭১ সালের মহান
মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়
রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে।মুক্তিযুদ্ধে প্রায়
সতের হাজার পুলিশ অফিসার বীরত্বের সাথে যুদ্ধ
করেন।যুদ্ধের সময় থানার যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র
পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যবহার করেন-
যা মুক্তিযুদ্ধের গতিকে দারুণভাবে ত্বরান্বিত
করেছিলো।প্রায় ১২০০ পুলিশ সদস্য মহান
মুক্তিসংগ্রামে শহীদ হন।পুলিশ বাহিনীর
আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে এবছর বাংলাদেশ
সরকার এ বাহিনীকে “স্বাধীনতা পদকে” ভূষিত
করেছে।
দেশের ভেতরে পুলিশদের নানান সীমাবদ্ধতার
মধ্যে কাজ করতে হয় এ কারণে হয়তো সব সময়
জনগণের প্রত্যাশিত মানের
সেবা আমরা দিতে পারিনা।আপনারা হয়তো অনেকেই
এটি জানলে অবাক হবেন যে ইউএন
পুলিশে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ
সংখ্যাক সদস্য কাজ করেন।বাংলাদেশ পুলিশের
পেশাগত দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের
জন্যে প্রভূত সম্মান বয়ে এনেছে।
উপসংহারঃ দেশের মাটিতে আড়াইশ বছরের
ঔপনিবেশিক প্রথার উপস্থিতি এবং নানাবিধ
সীমাবদ্ধতার কারণে পুলিশ কোন কোন
ক্ষেত্রে আশানুরূপ দক্ষতা প্রদর্শনে সক্ষম হচ্ছেনা।
পুলিশের ভূমিকাও বিভিন্ন কারণে হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশের একজন সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক
হিসেবে পুলিশ বাহিনীর এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূরীভূত
করবার দায়িত্ব আপনার কাঁধেও বর্তায়।
কাজেই,অন্ধভাবে বিষেদগার না করে এই
বাহিনীতে যোগদান করুন।এই পুলিশ বাহিনী আপনারই
বাহিনী,এর কোনকিছু অপছন্দ হলে তার পরিবর্তন
আপনিই আনতে পারবেন।পুলিশ সার্ভিসে আপনার
আগমন স্বার্থক হোক।
স্বাগতম!
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
১) আমার এ লেখাটিতে আমি পুলিশ ক্যাডারের
বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যথাসম্ভব
নিরপেক্ষভাবে একটি প্রাথমিক ধারণা দিতে চেয়েছি।
বিসিএস পরীক্ষার্থীরা পুলিশ
ক্যাডারকে পছন্দক্রমে দিয়ে ফর্মপূরণ করার সময় এ
বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন
এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন-এটাই এ লেখার
উদ্দেশ্য। দয়া করে কেউ ভেবে নেবেননা যে এখানে
পুলিশ ক্যাডারকে বাকি ক্যাডারদের চাইতে শ্রেষ্ঠ
প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
২) আশা করি এই গ্রুপের অন্যান্য ক্যাডাররাও
তাঁদের ক্যাডারের ভালোমন্দ
দিকগুলো পরীক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরবেন।
৩) এই লেখা সহ আমার যে কোন লেখার যৌক্তিক
সমালোচনা/ত্রুটি-বিচ্যুতি বিশ্লেষণ
সাদরে আমন্ত্রিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন