শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৪

সমাস

আBCS Expedition .
সমাস : সমাস শব্দের অর্থ-সংক্ষেপ, মিলন,
একাধিক পদ একপদীকরণ। সমাস মূলত
শব্দসমষ্টির সংক্ষিপ্তকরণের মাধ্যমে নতুন
শব্দগঠনের একটি প্রক্রিয়া।
পরস্পর অর্থসম্পর্কযুক্ত দুই বা তার অধিক পদ
এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলা হয়।
যেমন : গ্রন্থ রচনা করে যে = গ্রন্থকার;
মৌ সংগ্রাহক মাছি = মৌমাছি প্রভৃতি।
সমাস প্রধানত ৬ (ছয়) প্রকার। যথা: ১। দ্বন্দ্ব
সমাস ২। দ্বিগু সমাস ৩। অব্যয়ীভাব সমাস ৪।
কর্মধারয় সমাস ৫। তৎপুরুষ সমাস ৬।
বহুব্রীহি সমাস
সমাস বিশ্লেষণ ও নির্ণয়ে প্রয়োজনীয়
কয়েকটি পরিভাষার বিবরণ
ব্যাসবাক্য : সমাসবদ্ধ শব্দটির অর্থ বোঝবার
জন্য যে বাক্য বা বাক্যংশের প্রয়োগ
করতে হয়, তাকে ব্যাসবাক্য, সমাসবাক্য
বা বিগ্রহবাক্য বলে।
সমাস ব্যাসবাক্য
মনমাঝি মন রূপ মাঝি
হাঁটুজল হাঁটু পরিমাণ জল
সমস্যমান পদ : যে সব পদের মিলনে সমাবদ্ধ
পদ/সমস্তপদ গঠিত হয় তাদের
প্রত্যেককে সমস্যমান পদ বলে। যেমন : সপ্তাহ
সমাসটির ব্যাসবাক্য-সপ্ত অহের সমাহার।
এখানে সপ্ত, অহ প্রত্যেকটি সমস্যমান পদ।
সমস্তপদ/সমাসবদ্ধপদ : একাধিক পদ মিলিত
হযে একটি নতুন পদ গঠন করলে সেই নতুন
পদকে সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বা সমাস
বলা হয়।
সমস্যমান পদগুলির প্রথম পদটিকে পূর্বপদ
এবং পরবর্তী পদ বা পদগুলিকে পরপদ
বা উত্তরপদ বলে। ‘সমাস’ শব্দের অর্থ
সংক্ষেপ আর ‘ব্যাস’ শব্দের অর্থ ‘বিস্তার’।
নীচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল :
সমস্তপদ ব্যাসবাক্য
পূর্বপদ পরপদ
পঞ্চানন পঞ্চ আনন যার
পঞ্চ আনন
তীরবিদ্ধ তীরের দ্বারা বিদ্ধ
তীর বিদ্ধ
রাতকানা রাতে কানা রাত
কানা
ছেলেধরা ছেলে ধরে যে
ছেলে ধরে
মহাপুরুষ মহান্ যে পুরুষ
মহান্ পুরুষ
অব্যয়ীভাব সমাস
দিন দিন = প্রতিদিন ; কূলের সমীপে =
উপকূল : মিলের অভাব = গরমিল। এই
পদগুলিকে ‘প্রতি’; ‘উপ’, ‘গর’¾ উপসর্গ
বা অব্যয় পদ পূর্বে বসে সমাস
হয়েছে এবং অব্যয়ের অর্থই
প্রধানরুপে বোঝাচ্ছে; পরপদগুলি বিশেষ্য।
যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয়ের সঙ্গে পরপদ
বিশেষ্যের সমাস হয় এবং অব্যয় পদের অর্থই
প্রধানরুপে প্রতীয়মান হয় তাকে অব্যয়ীভাব
সমাস বলে।
এ সমাসের পূর্বপদের অব্যয়টির সাধারণত
কোনো অর্থ থাকে না। তবে এ সব অব্যয়
শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থ দ্যোতনা করে।
সামীপ্য (নিকট), বীপ্সা (পুন: পুন:), অনতিক্রম,
অভাব, পর্যন্ত, যোগ্যতা, সাদৃশ্য, পশ্চাৎ,
সাফল্য, অবধি প্রভৃতি নানাপ্রকার
অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।
(১) সামীপ্য: কুলের সমীপে =উপকূল; নগরীর
সমীপে = উপনগরী; কাঠের সমীপে = উপকণ্ঠ;
অক্ষির সমীপে = সমক্ষ; দুপুরের কাছাকাছি =
দুপুর নাগাদ; সকালের কাছাকাছি =
সকালনাগাদ।
(২) বীপ্সা (পুন: পুন: অর্থে)ঃ দিন দিন =
প্রতিদিন; গৃহে গৃহে = প্রতিগৃহে;
ক্ষণে ক্ষণে = অনুক্ষণ, প্রতিক্ষণ; মণে মণে =
প্রতিমণ, মণপিছু; জনে জনে = জনপ্রতি,
জনপিছু; জেলায় জেলায় = প্রতিজেলায়; বছর
বছর = ফিবছর; রোজ রোজ= হররোজ;
মাঠে মাঠে = মাঠকে-মাঠ, সনে সনে = ফি-
সন. গাঁ-এ গাঁ-এ = গাঁকে-গাঁ।
(৩) অনতিক্রম ঃ বিধিকে অতিক্রম
না করে = যথাবিধি ;উচিতকে অতিক্রম
না করে = যথোচিত; এইরকম, যথাশক্তি,
যথাসাধ্য, যথেচ্ছ, যথারীতি যথাযোগ্য,
যথার্থ, সাধ্যমতো, যথাজ্ঞান, আয়মাফিক।
(৪) অভাবঃ বিঘ্নের অভাব = নির্বিঘ্ন;
মানানের অভাব = বে-মানান; বন্দোবস্তের
অভাব = বে-বন্দোবস্ত; ভিক্ষার অভাব =
দুর্ভিক্ষ; ভাতের অভাব = হাভাত; মিলের
অভাব = গরমিল; ঝঞ্ঝাটের অভাব =
নির্ঝঞ্ঝাট; লুনের (লবনের) অভাব = আলুনি;
টকের অভাব মিষ্টির অভাব = না-টক-না-
মিষ্টি; ঘরের অভাব = হা-ঘর; হায়ার অভাব =
বেহায়া; মক্ষিকার অভাব = নির্মক্ষিক।
(৫) সীমা ও ব্যাপ্তি (পর্যন্ত)¾ জীবন
পর্যন্ত = আজীবন; সমুদ্র পর্যন্ত = আসমুদ্র;
বাল, বৃদ্ধ ও বণিতা পর্যন্ত =
আবালবৃদ্ধবণিতা; মূল পর্যন্ত = আমূল; মরণ
পর্যন্ত = আমরণ; পাদ (পা) থেকে মস্তক
পর্যন্ত = আপাদমস্তক; আদি থেকে অস্ত
পর্যন্ত = আদ্যন্ত; কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ; দিন
ব্যাপিয়া = দিনভর; রাত ব্যাপিয়া = রাতভর;
গলা পর্যন্ত = গলানাগাল। এইরকম-আশৈশব,
আসমুদ্রহিমাচল।
(৬) যোগ্যতাঃ রুপের যোগ্য = অনুরুপ; কুলের
যোগ্য = অনুকূল; গুণের যোগ্য = অনুগুণ।
(৭) পশ্চাৎ : গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন;
তাপের পশ্চাৎ = অনুতাপ; করণের পশ্চাৎ =
অনুকরণ; ইন্দ্রের পশ্চাৎ = উপেন্দ্র; গৃহের
পশ্চাৎ = অনুগৃহ।
(৮) সাদৃশ্য ঃ দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ; কথার
সদৃশ= উপকথা; ভাষার সদৃশ = উপভাষা; মুর্তির
সদৃশ = প্রতিমুর্তি, বনের সদৃশ = উপবন; কিন্তু
(হীন দেবতা = উপদেবতা); মন্ত্রীর সদৃশ =
উপমন্ত্রী; রাষ্ট্রপতির সদৃশ = উপরাষ্ট্রপতি;
দানের সদৃশ = অনুদান; ধ্বনির সদৃশ =
প্রতিধ্বনি; লক্ষের সদৃশ = উপলক্ষ।
(৯) ক্ষুদ্রতাঃ উপ (ক্ষুদ্র) গ্রহ = উপগ্রহ;
ক্ষুদ্র বিভাগ = উপবিভাগ, ক্ষুদ্র অঙ্গ =
প্রত্যঙ্গ; ক্ষুদ্র শাখা = প্রশাখা; ক্ষুদ্র সাগর =
উপসাগর; ক্ষুদ্র জাতি = উপজাতি; ক্ষুদ্র
নদী = উপনদী।
(১০) সাকল্যঃ বাল বৃদ্ধ ও বণিতা সকলে =
আবালবৃদ্ধবণিতা; পামর জনসাধারণ সকলে =
আপামর জনসাধারণ।
(১১) বৈপরীত্য : কূলের বিপরীত = প্রতিকূল;
দানের বিপরীত = প্রতিদান; শোধের বিপরীত
= প্রতিশোধ; পক্ষের বিপরীত = প্রতিপক্ষ।
(১২) সম্মুখ : অক্ষির সম্মুখে = প্রত্যক্ষ।
(১৩) নিপাতনে সিদ্ধ : অক্ষির অগোচর =
পরোক্ষ; আত্নাকে অধিকার করে = অধ্যাত্ম;
মুখের অভিমুখে = সম্মুখ; দৈবকে অধিকার
করে = অধিদৈব; দুঃ (দু:খকে) গত = দুর্গত;
দক্ষিণকে প্রগত = প্রদক্ষিণ;
বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল; বাস্ত্ত
থেকে উৎখাত = উদ্বাস্ত্ত;
শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল; হীন
দেবতা = অপদেবতা; ঝুড়িকে বাদ না দিয়ে =
ঝুড়িসুদ্ধ; দস্ত্তর অনুযায়ী = দস্ত্তর মতো;
প্রত্যাশার আধিক্য = হাপিত্যেশ; কাজ
চালাবার মতো = কাজচালাগোছ।
অব্যয়ীভাব সমাসের অতিরিক্ত উদাহরণ
অনুতাপ = তাপের পশ্চাৎ অনুগমন =
গমনের পশ্চাৎ
আকর্ণ = কর্ণ পর্যন্ত আমৃত্যু =
মৃত্যু পর্যন্ত
আমরণ = মরণ পর্যন্ত আনত = ঈষৎ
নত
উপগ্রহ = গ্রহের সদৃশ/ক্ষুদ্র
উপাধ্যক্ষ = অধ্যক্ষের সদৃশ্য
উপকূল = কূলের সমীপে প্রতিক্ষণ =
ক্ষণে ক্ষণে
প্রতিজন = জনে জনে প্রতিবার
= বার বার
প্রতিকূল = কূলের বিপরীত প্রতিবাদ
= বাদের বিপরীত
প্রতিকৃতি = কৃতির সদৃশ প্রতিধ্বনি =
ধ্বনির সদৃশ
প্রতিচ্ছবি = ছবির সদৃশ
যথারীতি = রীতি অতিক্রম না করে
যথাশক্তি = শক্তিকে অতিক্রম
না করে দুর্ভিক্ষ = ভিক্ষার অভাব
যথানিয়ম = নিয়মকে অতিক্রম না করে
যথাসময়ে = নির্দিষ্ট সময়ে অনুসরণ
= সরণের পশ্চাৎ
অধ্যাত্ম = আত্মাকে অধিকার করে
আজানু = জানু পর্যন্ত
আপদমস্তক = পা থেকে মাথা পর্যন্ত
আজন্ম = জন্ম পর্যন্ত
আরক্তিম = ঈষৎ রক্তিম উপভাষা =
ভাষার সদৃশ/ক্ষুদ্র
উপজাতি = জাতির সদৃশ/ ক্ষুদ্র উপসাগর
= সাগরের সদৃশ/ ক্ষুদ্র
উপবৃত্তি = বৃত্তির সদৃশ
উপপত্নী = পত্নীর সদৃশ
উপবন = বনের সদৃশ/ক্ষুদ্র উপশহর =
শহরের সমীপে
প্রতিদিন = দিন দিন প্রতিমন =
মন মন
প্রতিমুহূর্ত = মুহূর্ত মুহূর্ত প্রতিদান
= দানের বিপরীত
প্রত্যুত্তর = উত্তরের বিপরীত
প্রতিচ্ছায়া = ছায়ার সদৃশ
প্রতিমূর্তি = মূর্তির সদৃশ
প্রতিবিম্ব = বিম্বের সদৃশ
যথাবিধি = বিধি অতিক্রম না করে
যথাসাধ্য = সাধ্যকে অতিক্রম না করে
যথাস্থানে = নির্দিষ্ট স্থানে
যথার্থে = নির্দিষ্ট অর্থে
অতিদীর্ঘ = দীর্ঘ কে অতিক্রান্ত
অতিপ্রাকৃত = প্রাকৃতকে অতিক্রান্ত
অপবাদ = অপকৃষ্ট বাদ
অপকীর্তি = অপকৃষ্ট কীর্তি
দুর্গন্ধ = মন্দ গন্ধ দুর্দিন =
মন্দ দিন
দুর্বাক্য = মন্দ বাক্য দুরতিক্রম্য
= দুঃখ-কষ্টে অতিক্রম্য
পরিজন =পরিগত/আপন জন বিতৃষ্ণা =
বিগত তৃষ্ণা
বিমিশ্র = বিশেষ ভাবে মিশ্র হররোজ
= রোজ রোজ
ঘোলাটে = ঈষৎ ঘোলা ফিকানীল
= ঈষৎ নীল
হা-ঘর = ঘরের অভাব বেহায়া =
হায়ার অভাব
নিরামিষ = আমিষের অভাব অতিমানব
= মানবকে অতিক্রান্ত
অতীন্দ্রিয় = ইন্দ্রিয়কে অতিক্রান্ত
অতিপ্রিয় = অত্যধিক প্রিয়
দুর্জন = মন্দ জন দুর্বুদ্ধি =
মন্দ বুদ্ধি
দুর্নীতি = মন্দ নীতি বিনম্র =
বিশেষভাবে নম্র
বিপথ = নিকৃষ্ট পথ ফি বছর =
বছর বছর
গরমিল = মিলের অভাব লম্বাটে =
ঈষৎ লম্বা
ফিকালাল = ঈষৎ লাল হা-ভাত =
ভাতের অভাব
কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্য ও বিশেষণপদে যে সমাস হয়
এবং যেখানে পরপদের অর্থ প্রধান্যপায়
তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: নীলাকাশ
= নীল যে আকাশ; ভালোমানুষ =
ভালো যে মানুষ, লাল যে গোলাপ=
লালগোলাপ ইত্যাদি।
কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথা :
১। সাধারণ কর্মধারয় সমাস ২।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
৩। উপমান কর্মধারয় সমাস ৪। উপমিত
কর্মধারয় সমাস
৫। রূপক কর্মধারয় সমাস
১। সাধারণ কর্মধারয় সমাস : বিশেষণ-
বিশেষ্যে, বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-
বিশেষ্যে যে সমাস হয়, তাকে সাধারণ
কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন:
যিনি রাজা তিনিই ঋষি =রাজর্ষি;
যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর; লাল
যে ফুল = লাল ফুল ইত্যাদি।
২। মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস:
ব্যাসবাক্যের বিশ্লেষণমূলক মধ্যপদ লোপ
পেয়ে যে কর্মধারয় সমাস হয়,
তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলা হয়।
যেমন : পলান্ন = পল মিশ্রিত অন্ন; হাতঘড়ি =
হাতে পরার ঘড়ি ইত্যাদি।
৩। উপমান কর্মধারয় সমাস: উপমান ও সাধারণ
গুণবাচক পদ মিলে যে কর্মধারয় সমাস হয়,
তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলা হয়। যেমন:
বজ্রকঠিন = বজ্রে্যর ন্যায় কঠিন;
মিশকালো = মিশির ন্যায় কালো ইত্যাদি।
উপমান কর্মধারয় সমাসে একপদ বিশেষ্য
এবং অন্যটি বিশেষণ পদ হয়ে থাকে।
৪। উপমিত কর্মধারয় সমাস: যেখানে সাধারণ
গুণবাচক শব্দের উল্লেখ থাকে না, কেবল
উপমেয় ও উপমান পদে সমাস হয় এবং সাধারণ:
উপমেয় পদ পূর্বে চরণ কমলের ন্যয় = চরণকমল,
অধব পল্লবের ন্যায় = অধরপল্লব, পুরুষ
সিংহের ন্যয় = পুরুষসিংহ ইত্যাদি।
৫। রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমেয়কে উপমানের
সাথে অভেদ কল্পনা করে যে সমাস হয়,
তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলা হয়। এ
সমাসে একপদ রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; শোক রূপ সাগর =
শোকসাগর ইত্যাদি।
ছদ্মবেশী সমাস
মূলত সমাসবদ্ধ পদ কিন্তু ধ্বনিগত রূপান্তরের
ফলে তাদের আর চেনাই যায় না। যেমন, ভাজ
<ভ্রাতৃ-জায়া, ভাশুর<ভ্রাতৃশ্বশুর,
কুমোর<কুম্ভকার, কামার <কর্মকার,
চামার<চর্মকার, আটাসে (আটমেসে), অঘ্রান
(<অগ্রহায়ণ), আখড়া < অক্ষবাট, বাসর <
বাসগৃহ, পাঁচড়া< পঞ্চবট,
গাঙ্গুলি (গঙ্গকুলিক) ইত্যাদি।
এই সব শব্দ মূলত সমাসবদ্ধ, কিন্তু
চোখে তা ধরাই যায় না, এই রকম শব্দের
সংখ্যা বাংলায় নেহাত কম না।
এগুলোকে ছদ্মবেশী সমাস বলে।
বিদেশি নামে এমন সব উদাহরণ মেলে,
সেগুলো যে সমাসবদ্ধ পদ বা চট
করে ধরা পড়ে না। যেমন Johnson = son of
John, বেনজামিন = জামিনের ছেলে, Dickson
= son of Dick ইত্যাদি।
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসের পূর্বপদের
বিভক্তি (২য়া থেকে ৭মী) লোপ পায়
এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে,
তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন :
সুখকে প্রাপ্ত = সুখপ্রাপ্ত, রাজার পুত্র =
রাজপুত্র ইত্যাদি।
এখানে সুখকে (সুখ+কে) কে, রাজার
(রাজা+র) র বিভক্তি লোপ পেয়ে ‘সুখপ্রাপ্ত’
ও ‘রাজপুত্র’ হয়েছে।
তৎপুরুষ সমাস প্রধানত ৯ প্রকার। যথা :
১। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ; ২। তৃতীয়া তৎপুরুষ;
৩। চতুর্থী তৎপুরুষ; ৪। পঞ্চমী তৎপুরুষ;
৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ; ৬। সপ্তমী তৎপুরুষ;
৭। অলুক তৎপুরুষ; ৮। নঞ তৎপুরুষ;
৯। উপপদ তৎপুরুষ;
১। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের
দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) লোপ
পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়,
তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন:
গা কে ঢাকা = গাঢাকা; জল কে তোলা =
জলতোলা ইত্যাদি।
২। তৃতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের
তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক) লোপ
পেয়ে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :
ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা;
লাঠি দ্বারা পেটা = লাঠিপেটা ইত্যাদি।
৩। চতুর্থী তৎপুরুষ: পূর্বপদের
চতুর্থী বিভক্তি (কে, রে, জন্যে, নিমিত্তে,
উদ্দেশ্যে) লোপ পেয়ে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
হয়। সাধারণত এই সমাসে ‘নিমিত্ত’
ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দেব কে দত্ত =
দেবদত্ত; বসতের নিমিত্তে বাড়ী =
বসতবাড়ী ইত্যাদি।
৪। পঞ্চমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের
পঞ্চমী বিভক্তি (হইতে, থেকে, চেয়ে) লোপ
পেয়ে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন:
বিলাত থেকে ফেরত = বিলাত ফেরত; পদ
থেকে চ্যুত = পদচ্যুত ইত্যাদি।
৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ: পূর্বপদের
ষষ্ঠী বিভক্তি (র,এর) লোপ
পেয়ে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: রাজার
পুত্র = রাজপুত্র; কূপের মন্ডক = কূপমন্ডক
ইত্যাদি।
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ
সমাসে পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র,এর) লোপ
পায় না তাকে বলে অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ।
যেমন¾ সোনারতরী, যৌবনের গান, মাটির
ময়না, ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ,
মামার বাড়ি , সাপের পা, মনের মানুষ, কলের
গান ইত্যাদি।
৬। সপ্তমী তৎপুরুষ: পূর্বপদের
সপ্তমী বিভক্তি (এ,য়,তে) লোপ
পেয়ে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন:
বনে বাস = বনবাস, দিবায় স্বপ্ন=দিবাস্বপ্ন,
বাক্সে বন্দী = বাক্সবন্দী ইত্যাদি।
৭। অলুক তৎপুরুষ: ‘অলুক’ শব্দের অর্থ লুপ্ত
না হওয়া। অর্থাৎ পূর্বপদের বিভক্তি লোপ
না পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে অলুক
তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন: তেলে ভাজা =
তেলেভাজা; কলুর বলদ = কলুরবলদ ইত্যাদি।
৮। নঞ তৎপুরুষ: ‘নঞ’ শব্দের অর্থ ‘না’।
অর্থাৎ পূর্বপদে না বোধক অব্যয় যুক্ত
হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ
সমাস বলা হয়। যেমন: ন জানা = অজানা; ন
হাজির = গরহাজির ইত্যাদি।
৯। উপপদ তৎপুরুষ: পূর্বপদে নামপদ
এবং পরপদে কৃদন্ত শব্দ
(ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু + কৃৎ প্রত্যয় = কৃদন্ত
শব্দ) থেকে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ
সমাস বলা হয়। যেমন : পকেট মারে যে =
পকেটমার; ছেলে ধরে যে = ছেলে ধরা, জল
দেয় যে =জলদ ইত্যাদি।
দ্বন্দ্ব সমাস
অর্থবিচারে যে সমাসে দুইপদ (পূর্বপদ
ও পরপদ)-এর সমান গুরুত্ব থাকে এবং দুই
পদে একই বিভক্তি যুক্ত থাকে তাকে দ্বন্দ্ব
সমাস বলা হয়। যেমন: মা-বাবা, সাদা-কালো,
সোনা-রূপা, ঘরে-বাইরে, তেলে-
জলে প্রভৃতি।
দ্বন্দ্ব সমাসে দুই পদ একই শ্রেণীর হয়
এবং দুইপদ দুজন
ব্যক্তি বা দুটি বস্ত্তকে বোঝায়। যেমন :
ক. দুপদই বিশেষ্য : অহি-নকুল, পিতা-পুত্র
প্রভৃতি।
খ. দুপদই বিশেষণ : সাদা-কালো, ক্ষত-বিক্ষত
প্রভৃতি।
গ. দুপদই সর্বনাম : তোমরা, আমরা প্রভৃতি।
ঘ. দুপদই ক্রিয়াপদ : বেচা-কেনা, আসা-
যাওয়া প্রভৃতি।
² দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্য গঠন : পদদুটোর
মাঝে ‘ও’, ‘এবং’ যুক্ত করলে ব্যাসবাক্য
হয়ে যাবে। যেমন : অহিনকুল = অহি ও নকুল;
পিতা-পুত্র = পিতা ও পুত্র; সাদা-কালো =
সাদা ও কালো; ক্ষত-বিক্ষত = ক্ষত ও বিক্ষত;
তোমরা = তুমিও সে; আমরা = আমি, তুমি ও
সে; বেচা-কেনা = বেচা ও কেনা; আসা-
যাওয়া = আসা ও যাওয়া।
² দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকারভেদ :
ক. সমার্থক দ্বন্দ্ব : দ্বন্দ্ব সমাসের দুই পদ
সমার্থক হলে তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস
বলে। যেমন : রাজা-বাদশা, কাগজ ও পত্র =
কাগজ-পত্র, কাজ ও কর্ম = কাজ-কর্ম, জন ও
মানব = জন-মানব, ধন ও দৌলত = ধন-দৌলত
ইত্যাদি।
খ. বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব : দ্বন্দ্ব সমাসের দুই পদ
বিপরীত অর্থ প্রকাশ
করলে তাকে বিপরীতার্থক বা বিরোধার্থক
দ্বন্দ্ব সমাস বলা হয়। যেমন : ভালো ও মন্দ =
ভালো-মন্দ; বাদি ও বিবাদি = বাদি-
বিবাদি ইত্যাদি।
গ. মিলনার্থক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে দুই
পদের অর্থের মধ্যে সম্পর্ক বা সৌহার্দ
থাকে, তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস
বলে যেমন: ভাই ও বোন = ভাই-বোন;
স্বামী ও স্ত্রী = স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি।
ঘ. অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসের দুই
পদে একই বিভক্তি যুক্ত থাকে অথবা কোন
বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব
সমাস বলে। যেমন : দুধে ও ভাতে = দুধে-
ভাতে; ঘরে ও বাইরে = ঘরে-বাইরে ইত্যাদি।
ঙ. ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব : নির্দিষ্ট
ব্যক্তিদ্বয় বা নির্দিষ্ট বস্ত্তদ্বয়
না বুঝিয়ে অনির্দিষ্ট কোনো কিছু
বোঝালে তাকে ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব
বলা হয়। যেমন : দোকান-পাট; বাসন-কোসন
ইত্যাদি।
চ. একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস : যে দ্বন্দ্ব সমাসের
সুনির্দিষ্ট পূর্বপদ বা পরপদ থাকে না, কিন্তু
দুই পদ সমান অর্থবোধক সর্বনাম
দ্বারা সমাসটি গঠিত হয়ে থাকে,
তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন :
আমরা, তোমরা প্রভৃতি।
এ সমাস দুটির ব্যাসবাক্য
হতে পারে যথাক্রমে-আমরা = আমি ও
তুমি কিংবা আমি ও তোমরা কিংবা আমি-
তুমি ও সে। তোমরা = এ সমাসটির ব্যাসবাক্য
হতে পারে-তুমি ও সে কিংবা তুমি ও তারা।
ছ. বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস : যে দ্বন্দ্ব
সমাসে দুয়ের অধিক পদ সমাসবদ্ধ হয়ে থাকে,
তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন :
টাকা-আনা-পাই; রোদ-বৃষ্টি-ঝড়; কাঠ-খড়-
কেরোসিন প্রভৃতি।
দ্বন্দ্ব সমাসের অতিরিক্ত উদহারণ
² বিশেষ্য + বিশেষ্য পদের দ্বন্দ্ব সমাস
আইন-আদালত = আইন ও আদালত চন্দ্র-সূর্য
= চন্দ্র ও সূর্য
ভাবভঙ্গী = ভাব ও ভঙ্গী
ছাত্রছাত্রী=ছাত্র ও ছাত্রী
জাঁকজমক=জাঁক ও জমক
শালতালতমাল= শাল, তাল ও তামাল
দোয়াত-কলম = দোয়াত ও কলম
সৈন্যসামন্ত = সৈন্যও সামন্ত
কাগজ-কলম=কাগজ ও কলম
রীতিনীতি=রীতি ও নীতি
পিতা-পুত্র=পিতা ও পুত্র ঘটি-
বাটি=ঘটি ও বাটি
ঝড়-বৃষ্টি = ঝড় ও বৃষ্টি
শাকসবজি = শাক ও সবজি
ক্ষেত-খামার - ক্ষেত ও খামার
রাজা-বাদশা = রাজা ও বাদশা
জন-মানব=জন ও মানব কীট-পতঙ্গ
= কীট ও পতঙ্গ
সোনা-রূপা = সোনা ও রূপা কথা-
বার্তা = কথা ও বার্তা
পোকা-মাকড় = পোকা ও মাকড় শহর-
গ্রাম = শহর ও গ্রাম
ছেলে-মেয়ে= ছেলে ও মেয়ে মাঠ-
ঘাট=মাঠ ও ঘাট
উজির-নাজির = উজির ও নাজির লোক-
লস্কর = লোক ও লস্কর
ফলমূল =ফল ও মূল নথি-পত্র =
নথি ও পত্র
সভাসমিতি = সভা ও সমিতি পথ-ঘাট
= পথ ও ঘাট
মামলা-মোকদ্দমা = মামলা ও
মোকাদ্দমা ডাক্তার-বৈদ্য=ডাক্তার ও
বৈদ্য
ধনজন = ধন ও জন মশা-
মাছি=মশা ও মাছি
² বিশেষণ + বিশেষণ পদের দ্বন্দ্ব সমাস
উচু-নিচু=উঁচু ও নিচু ভালো-
মন্দ = ভালো ও মন্দ
ক্ষত-বিক্ষত = ক্ষত ও বিক্ষত হতাহত
= হত ও আহত
লঘু-গুরু = লঘু ও গুরু ইতর-ভদ্র =
ইতর ও ভদ্র
সহজসরল=সহজ ও সরল কানা-
খোঁড়া = কানা ও খোঁড়া
সাদা-কালো=সাদা ও কালো লাল-
নীল=লাল ও নীল
হিতাহিত=হিত ও অহিত
কাঁচাপাকা = কাঁচা ও পাকা
নরম-গরম = নরম ও গরম দশ-বিশ = দশ
ও বিশ
² সর্বনাম + সর্বনাম পদের দ্বন্দ্ব সমাস
যা-তা = যা ও তা যে-সে =
যে ও সে
যিনি-তিনি = যিনি ও তিনি যেমন-
তেমন = যেমন ও তেমন
তোমরা = তুমি ও সে আমরা =
আমি ও তুমি
² ক্রিয়া + ক্রিয়াপদের দ্বন্দ্ব সমাস
ভেঙেচুরে = ভেঙে ও চুরে
চেয়ে-চিন্তে = চেয়ে ও চিন্তে
হেসে-খেলে = হেসে ও খেলে
উঠে-পড়ে = উঠে ও পড়ে
বলে - কয়ে = বলে ও কয়ে হেসে-
কেঁদে = হেসে ও কেঁদে
মেরে-ধরে = মেরে ও ধরে উঠ-
বস=উঠ ও বস
জেনেশুনে = জেনে ও শুনে
দ্বিগু সমাস
যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক
এবং সমাসটি সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ
করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়। এ সমাসের
পরপদ সাধারণত নামপদ হয়। যেমন : সপ্তাহ
(সপ্ত অহের সমষ্টি); ত্রিফলা (তিন ফলের
সমহার); শতাব্দী (শত অব্দের সমষ্টি) প্রভৃতি।
² ব্যাসবাক্যগঠন : এ সমাসের
বাস্যবাক্যে ‘সমাহার’ শব্দটি আসে। যেমন:
চৌমুহনী = চৌ মোহনার সমাহার;
পঞ্চবটী=পঞ্চবটের সমাহার।
² দ্বিগু সমাসের উদাহরণ :
কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্য ও বিশেষণপদে যে সমাস হয়
এবং যেখানে পরপদের অর্থ প্রধান্যপায়
তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: নীলাকাশ
= নীল যে আকাশ; ভালোমানুষ =
ভালো যে মানুষ, লাল যে গোলাপ=
লালগোলাপ ইত্যাদি।
কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথা :
১। সাধারণ কর্মধারয় সমাস ২।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
৩। উপমান কর্মধারয় সমাস ৪। উপমিত
কর্মধারয় সমাস
৫। রূপক কর্মধারয় সমাস
১। সাধারণ কর্মধারয় সমাস : বিশেষণ-
বিশেষ্যে, বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-
বিশেষ্যে যে সমাস হয়, তাকে সাধারণ
কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন:
যিনি রাজা তিনিই ঋষি =রাজর্ষি;
যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর; লাল
যে ফুল = লাল ফুল ইত্যাদি।
২। মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস:
ব্যাসবাক্যের বিশ্লেষণমূলক মধ্যপদ লোপ
পেয়ে যে কর্মধারয় সমাস হয়,
তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলা হয়।
যেমন : পলান্ন = পল মিশ্রিত অন্ন; হাতঘড়ি =
হাতে পরার ঘড়ি ইত্যাদি।
৩। উপমান কর্মধারয় সমাস: উপমান ও সাধারণ
গুণবাচক পদ মিলে যে কর্মধারয় সমাস হয়,
তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলা হয়। যেমন:
বজ্রকঠিন = বজ্রে্যর ন্যায় কঠিন;
মিশকালো = মিশির ন্যায় কালো ইত্যাদি।
উপমান কর্মধারয় সমাসে একপদ বিশেষ্য
এবং অন্যটি বিশেষণ পদ হয়ে থাকে।
৪। উপমিত কর্মধারয় সমাস: যেখানে সাধারণ
গুণবাচক শব্দের উল্লেখ থাকে না, কেবল
উপমেয় ও উপমান পদে সমাস হয় এবং সাধারণ:
উপমেয় পদ পূর্বে চরণ কমলের ন্যয় = চরণকমল,
অধব পল্লবের ন্যায় = অধরপল্লব, পুরুষ
সিংহের ন্যয় = পুরুষসিংহ ইত্যাদি।
৫। রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমেয়কে উপমানের
সাথে অভেদ কল্পনা করে যে সমাস হয়,
তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলা হয়। এ
সমাসে একপদ রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; শোক রূপ সাগর =
শোকসাগর ইত্যাদি।
ছদ্মবেশী সমাস
মূলত সমাসবদ্ধ পদ কিন্তু ধ্বনিগত রূপান্তরের
ফলে তাদের আর চেনাই যায় না। যেমন, ভাজ
<ভ্রাতৃ-জায়া, ভাশুর<ভ্রাতৃশ্বশুর,
কুমোর<কুম্ভকার, কামার <কর্মকার,
চামার<চর্মকার, আটাসে (আটমেসে), অঘ্রান
(<অগ্রহায়ণ), আখড়া < অক্ষবাট, বাসর <
বাসগৃহ, পাঁচড়া< পঞ্চবট,
গাঙ্গুলি (গঙ্গকুলিক) ইত্যাদি।
এই সব শব্দ মূলত সমাসবদ্ধ, কিন্তু
চোখে তা ধরাই যায় না, এই রকম শব্দের
সংখ্যা বাংলায় নেহাত কম না।
এগুলোকে ছদ্মবেশী সমাস বলে।
বিদেশি নামে এমন সব উদাহরণ মেলে,
সেগুলো যে সমাসবদ্ধ পদ বা চট
করে ধরা পড়ে না। যেমন Johnson = son of
John, বেনজামিন = জামিনের ছেলে, Dickson
= son of Dick ইত্যাদি।
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসের পূর্বপদের
বিভক্তি (২য়া থেকে ৭মী) লোপ পায়
এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে,
তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন :
সুখকে প্রাপ্ত = সুখপ্রাপ্ত, রাজার পুত্র =
রাজপুত্র ইত্যাদি।
এখানে সুখকে (সুখ+কে) কে, রাজার
(রাজা+র) র বিভক্তি লোপ পেয়ে ‘সুখপ্রাপ্ত’
ও ‘রাজপুত্র’ হয়েছে।
তৎপুরুষ সমাস প্রধানত ৯ প্রকার। যথা :
১। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ; ২। তৃতীয়া তৎপুরুষ;
৩। চতুর্থী তৎপুরুষ; ৪। পঞ্চমী তৎপুরুষ;
৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ; ৬। সপ্তমী তৎপুরুষ;
৭। অলুক তৎপুরুষ; ৮। নঞ তৎপুরুষ;
৯। উপপদ তৎপুরুষ;
১। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের
দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) লোপ
পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়,
তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন:
গা কে ঢাকা = গাঢাকা; জল কে তোলা =
জলতোলা ইত্যাদি।
২। তৃতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের
তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক) লোপ
পেয়ে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :
ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা;
লাঠি দ্বারা পেটা = লাঠিপেটা ইত্যাদি।
৩। চতুর্থী তৎপুরুষ: পূর্বপদের
চতুর্থী বিভক্তি (কে, রে, জন্যে, নিমিত্তে,
উদ্দেশ্যে) লোপ পেয়ে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
হয়। সাধারণত এই সমাসে ‘নিমিত্ত’
ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দেব কে দত্ত =
দেবদত্ত; বসতের নিমিত্তে বাড়ী =
বসতবাড়ী ইত্যাদি।
৪। পঞ্চমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের
পঞ্চমী বিভক্তি (হইতে, থেকে, চেয়ে) লোপ
পেয়ে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন:
বিলাত থেকে ফেরত = বিলাত ফেরত; পদ
থেকে চ্যুত = পদচ্যুত ইত্যাদি।
৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ: পূর্বপদের
ষষ্ঠী বিভক্তি (র,এর) লোপ
পেয়ে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: রাজার
পুত্র = রাজপুত্র; কূপের মন্ডক = কূপমন্ডক
ইত্যাদি।
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ
সমাসে পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র,এর) লোপ
পায় না তাকে বলে অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ।
যেমন¾ সোনারতরী, যৌবনের গান, মাটির
ময়না, ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ,
মামার বাড়ি , সাপের পা, মনের মানুষ, কলের
গান ইত্যাদি।
৬। সপ্তমী তৎপুরুষ: পূর্বপদের
সপ্তমী বিভক্তি (এ,য়,তে) লোপ
পেয়ে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন:
বনে বাস = বনবাস, দিবায় স্বপ্ন=দিবাস্বপ্ন,
বাক্সে বন্দী = বাক্সবন্দী ইত্যাদি।
৭। অলুক তৎপুরুষ: ‘অলুক’ শব্দের অর্থ লুপ্ত
না হওয়া। অর্থাৎ পূর্বপদের বিভক্তি লোপ
না পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে অলুক
তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন: তেলে ভাজা =
তেলেভাজা; কলুর বলদ = কলুরবলদ ইত্যাদি।
৮। নঞ তৎপুরুষ: ‘নঞ’ শব্দের অর্থ ‘না’।
অর্থাৎ পূর্বপদে না বোধক অব্যয় যুক্ত
হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ
সমাস বলা হয়। যেমন: ন জানা = অজানা; ন
হাজির = গরহাজির ইত্যাদি।
৯। উপপদ তৎপুরুষ: পূর্বপদে নামপদ
এবং পরপদে কৃদন্ত শব্দ
(ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু + কৃৎ প্রত্যয় = কৃদন্ত
শব্দ) থেকে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ
সমাস বলা হয়। যেমন : পকেট মারে যে =
পকেটমার; ছেলে ধরে যে = ছেলে ধরা, জল
দেয় যে =জলদ ইত্যাদি।
দ্বন্দ্ব সমাস
অর্থবিচারে যে সমাসে দুইপদ (পূর্বপদ
ও পরপদ)-এর সমান গুরুত্ব থাকে এবং দুই
পদে একই বিভক্তি যুক্ত থাকে তাকে দ্বন্দ্ব
সমাস বলা হয়। যেমন: মা-বাবা, সাদা-কালো,
সোনা-রূপা, ঘরে-বাইরে, তেলে-
জলে প্রভৃতি।
দ্বন্দ্ব সমাসে দুই পদ একই শ্রেণীর হয়
এবং দুইপদ দুজন
ব্যক্তি বা দুটি বস্ত্তকে বোঝায়। যেমন :
ক. দুপদই বিশেষ্য : অহি-নকুল, পিতা-পুত্র
প্রভৃতি।
খ. দুপদই বিশেষণ : সাদা-কালো, ক্ষত-বিক্ষত
প্রভৃতি।
গ. দুপদই সর্বনাম : তোমরা, আমরা প্রভৃতি।
ঘ. দুপদই ক্রিয়াপদ : বেচা-কেনা, আসা-
যাওয়া প্রভৃতি।
² দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্য গঠন : পদদুটোর
মাঝে ‘ও’, ‘এবং’ যুক্ত করলে ব্যাসবাক্য
হয়ে যাবে। যেমন : অহিনকুল = অহি ও নকুল;
পিতা-পুত্র = পিতা ও পুত্র; সাদা-কালো =
সাদা ও কালো; ক্ষত-বিক্ষত = ক্ষত ও বিক্ষত;
তোমরা = তুমিও সে; আমরা = আমি, তুমি ও
সে; বেচা-কেনা = বেচা ও কেনা; আসা-
যাওয়া = আসা ও যাওয়া।
² দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকারভেদ :
ক. সমার্থক দ্বন্দ্ব : দ্বন্দ্ব সমাসের দুই পদ
সমার্থক হলে তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস
বলে। যেমন : রাজা-বাদশা, কাগজ ও পত্র =
কাগজ-পত্র, কাজ ও কর্ম = কাজ-কর্ম, জন ও
মানব = জন-মানব, ধন ও দৌলত = ধন-দৌলত
ইত্যাদি।
খ. বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব : দ্বন্দ্ব সমাসের দুই পদ
বিপরীত অর্থ প্রকাশ
করলে তাকে বিপরীতার্থক বা বিরোধার্থক
দ্বন্দ্ব সমাস বলা হয়। যেমন : ভালো ও মন্দ =
ভালো-মন্দ; বাদি ও বিবাদি = বাদি-
বিবাদি ইত্যাদি।
গ. মিলনার্থক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে দুই
পদের অর্থের মধ্যে সম্পর্ক বা সৌহার্দ
থাকে, তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস
বলে যেমন: ভাই ও বোন = ভাই-বোন;
স্বামী ও স্ত্রী = স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি।
ঘ. অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসের দুই
পদে একই বিভক্তি যুক্ত থাকে অথবা কোন
বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব
সমাস বলে। যেমন : দুধে ও ভাতে = দুধে-
ভাতে; ঘরে ও বাইরে = ঘরে-বাইরে ইত্যাদি।
ঙ. ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব : নির্দিষ্ট
ব্যক্তিদ্বয় বা নির্দিষ্ট বস্ত্তদ্বয়
না বুঝিয়ে অনির্দিষ্ট কোনো কিছু
বোঝালে তাকে ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব
বলা হয়। যেমন : দোকান-পাট; বাসন-কোসন
ইত্যাদি।
চ. একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস : যে দ্বন্দ্ব সমাসের
সুনির্দিষ্ট পূর্বপদ বা পরপদ থাকে না, কিন্তু
দুই পদ সমান অর্থবোধক সর্বনাম
দ্বারা সমাসটি গঠিত হয়ে থাকে,
তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন :
আমরা, তোমরা প্রভৃতি।
এ সমাস দুটির ব্যাসবাক্য
হতে পারে যথাক্রমে-আমরা = আমি ও
তুমি কিংবা আমি ও তোমরা কিংবা আমি-
তুমি ও সে। তোমরা = এ সমাসটির ব্যাসবাক্য
হতে পারে-তুমি ও সে কিংবা তুমি ও তারা।
ছ. বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস : যে দ্বন্দ্ব
সমাসে দুয়ের অধিক পদ সমাসবদ্ধ হয়ে থাকে,
তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন :
টাকা-আনা-পাই; রোদ-বৃষ্টি-ঝড়; কাঠ-খড়-
কেরোসিন প্রভৃতি।
দ্বন্দ্ব সমাসের অতিরিক্ত উদহারণ
² বিশেষ্য + বিশেষ্য পদের দ্বন্দ্ব সমাস
আইন-আদালত = আইন ও আদালত চন্দ্র-সূর্য
= চন্দ্র ও সূর্য
ভাবভঙ্গী = ভাব ও ভঙ্গী
ছাত্রছাত্রী=ছাত্র ও ছাত্রী
জাঁকজমক=জাঁক ও জমক
শালতালতমাল= শাল, তাল ও তামাল
দোয়াত-কলম = দোয়াত ও কলম
সৈন্যসামন্ত = সৈন্যও সামন্ত
কাগজ-কলম=কাগজ ও কলম
রীতিনীতি=রীতি ও নীতি
পিতা-পুত্র=পিতা ও পুত্র ঘটি-
বাটি=ঘটি ও বাটি
ঝড়-বৃষ্টি = ঝড় ও বৃষ্টি
শাকসবজি = শাক ও সবজি
ক্ষেত-খামার - ক্ষেত ও খামার
রাজা-বাদশা = রাজা ও বাদশা
জন-মানব=জন ও মানব কীট-পতঙ্গ
= কীট ও পতঙ্গ
সোনা-রূপা = সোনা ও রূপা কথা-
বার্তা = কথা ও বার্তা
পোকা-মাকড় = পোকা ও মাকড় শহর-
গ্রাম = শহর ও গ্রাম
ছেলে-মেয়ে= ছেলে ও মেয়ে মাঠ-
ঘাট=মাঠ ও ঘাট
উজির-নাজির = উজির ও নাজির লোক-
লস্কর = লোক ও লস্কর
ফলমূল =ফল ও মূল নথি-পত্র =
নথি ও পত্র
সভাসমিতি = সভা ও সমিতি পথ-ঘাট
= পথ ও ঘাট
মামলা-মোকদ্দমা = মামলা ও
মোকাদ্দমা ডাক্তার-বৈদ্য=ডাক্তার ও
বৈদ্য
ধনজন = ধন ও জন মশা-
মাছি=মশা ও মাছি
² বিশেষণ + বিশেষণ পদের দ্বন্দ্ব সমাস
উচু-নিচু=উঁচু ও নিচু ভালো-
মন্দ = ভালো ও মন্দ
ক্ষত-বিক্ষত = ক্ষত ও বিক্ষত হতাহত
= হত ও আহত
লঘু-গুরু = লঘু ও গুরু ইতর-ভদ্র =
ইতর ও ভদ্র
সহজসরল=সহজ ও সরল কানা-
খোঁড়া = কানা ও খোঁড়া
সাদা-কালো=সাদা ও কালো লাল-
নীল=লাল ও নীল
হিতাহিত=হিত ও অহিত
কাঁচাপাকা = কাঁচা ও পাকা
নরম-গরম = নরম ও গরম দশ-বিশ = দশ
ও বিশ
² সর্বনাম + সর্বনাম পদের দ্বন্দ্ব সমাস
যা-তা = যা ও তা যে-সে =
যে ও সে
যিনি-তিনি = যিনি ও তিনি যেমন-
তেমন = যেমন ও তেমন
তোমরা = তুমি ও সে আমরা =
আমি ও তুমি
² ক্রিয়া + ক্রিয়াপদের দ্বন্দ্ব সমাস
ভেঙেচুরে = ভেঙে ও চুরে
চেয়ে-চিন্তে = চেয়ে ও চিন্তে
হেসে-খেলে = হেসে ও খেলে
উঠে-পড়ে = উঠে ও পড়ে
বলে - কয়ে = বলে ও কয়ে হেসে-
কেঁদে = হেসে ও কেঁদে
মেরে-ধরে = মেরে ও ধরে উঠ-
বস=উঠ ও বস
জেনেশুনে = জেনে ও শুনে
দ্বিগু সমাস
যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক
এবং সমাসটি সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ
করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়। এ সমাসের
পরপদ সাধারণত নামপদ হয়। যেমন : সপ্তাহ
(সপ্ত অহের সমষ্টি); ত্রিফলা (তিন ফলের
সমহার); শতাব্দী (শত অব্দের সমষ্টি) প্রভৃতি।
² ব্যাসবাক্যগঠন : এ সমাসের
বাস্যবাক্যে ‘সমাহার’ শব্দটি আসে। যেমন:
চৌমুহনী = চৌ মোহনার সমাহার;
পঞ্চবটী=পঞ্চবটের সমাহার।
² দ্বিগু সমাসের উদাহরণ :
তেমাথা = তে মাথার সমাহার
চতুষ্পদী = চার পায়ের সমাহার
চতুরঙ্গ = চতুঃ (চার) অঙ্গের সমাহার
চৌপদী = চৌ (চার) পদের সমাহার
ত্রিপদী =ত্রি (তিন) পদের সমাহার
ত্রিফলা = ত্রি (তিন) ফলের
সমাহার
ত্রিলোক =ত্রি (তিন) লোকের সমাহার
পঞ্চনদ = পঞ্চ (পাঁচ) নদের সমাহার
পঞ্চবটী=পঞ্চ (পাঁচ) বটীর
সমাহার
দশচক্র=দশচক্রের সমাহার দুকূল=দুই কূলের
সমাহার
পঞ্চভূত = পঞ্চ (পাঁচ) ভূতের সমাহার
ত্রিকূল = ত্রিকূলের সমাহার
ত্রিকোণ = ত্রিকোণের সমাহার
ত্রিভুবন = ত্রিভুবনের সমাহার
ত্রিরত্ন = ত্রিরত্নের সমাহার
পঞ্চমুখ = পঞ্চমুখের সমাহার
পঞ্চইন্দ্রিয় = পঞ্চইন্দ্রিয়ের সমাহার
দুআনা=দু (দুই) আনার সমাহার
চৌমুহনী = চৌ (চার) মোহনার সমাহার
নিত্য সমাস
যে সমাসের ব্যাসবাক্য হয় না,
কিংবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য পদের
সাহায্য নিতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে।
যেমন: অন্য দেশ = দেশান্তর; ঈষৎ লাল =
লালচে, অন্যকাল = কালান্তর ইত্যাদি।
নিত্য সমাসের কয়েকটি উদাহরণ
কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র
সমস্তগ্রাম = গ্রামশুদ্ধ
অন্যদেশ = দেশান্তর
কেবল মাত্র = তন্মাত্র
একটি কাপড় = কাপড়খানা
কেবল জল = জলমাত্র
অন্যস্থান = স্থানান্তর
অন্যগ্রাম = গ্রামান্তর
অনেক মানুষ = মানুষগুলো
অন্যগৃহ = গৃহান্তর
প্রাদি সমাস
প্রাদি সমাস মূলত অব্যয়ীভাব সমাসের
বৈচিত্র্য। গঠনের দিক
থেকে বিবেচনা করলে আমরা দেখি যে,
অব্যয়ীভাবের মতোই প্রথমে উপসর্গ
এবং অব্যয় সংযুক্ত হয়ে প্রাদি সমাস হয়।
প্রাদি সমাসে সাধারণত প্র, পরা, অনু
ইত্যাদি উপসর্গ পূর্বপদে বসে। যেমন: প্র
(প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন, পরি (চতুর্দিকে)
ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, অনু (পশ্চাৎ) তাপ = অনুতাপ
ইত্যাদি।
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে দুই পদের অর্থ প্রাধান্য
না পেয়ে তৃতীয় অর্থ প্রাধান্য পায়,
তাকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। যেমন : দশ
আনন যার = দশানন। এখানে ‘দশ’ ও ‘আনন’ এই
দুটি পদের সমাস হয়েছে, কিন্তু সমাস-
নিষ্পান্ন পদটি এই পদ দুটির কোনটির অর্থ
প্রকাশ করছে না। সমাসবদ্ধ পদে দশ আনন (মুখ)
বিশিষ্ট ব্যক্তিকে (রাবন) বোঝানো হয়েছে।
‘বহুব্রীহি’ পদটিই বহুব্রীহি সমাস নিষ্পন্ন, বহু
(অনেক) ব্রীহি (ধান) আছে যার;
সে বহুব্রীহি (ধনী লোক)। এখানে ‘বহু’
এবং ‘ব্রীহি’ সমস্যমান পদ দু’টির যোগে সমস্ত
পদটির দ্বারা একটি তৃতীয় পদের
(এখানে ধনী ব্যক্তির) প্রাধান্য পেয়েছে। এই
রকম সমাসকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণী বিভাগ :
1. 1. সামানাধিকরণ বহুব্রীহি : পূর্বপদ
বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য
হলে তাকে সমানাধিকরণ
বহুব্রীহি বলা হয়। যেমন: নীলকণ্ঠ = নীল
কণ্ঠ যার; পোড়াকপাল = পোড়া কপাল
যার, পক্ব কেশ যার = পক্বকেশ ইত্যাদি।
2. 2. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি : উভয়পদ
(পূর্বপদ,পরপদ) বিশেষ্য হলে ব্যধিকরণ
বহুব্রীহি হয়। যেমন : বীণা পাণিতে যার =
বীণাপাণি, গোঁফে খেঁজুর যার = গোঁফ-
খেঁজুরে ইত্যাদি।
3. 3. ব্যতিহার বহুব্রীহি : পরস্পর
একজাতীয় ক্রিয়াকরণ
বোঝালে যে বহুব্রীহি সমাস হয়
তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি বলে। এই
সমাসে পূর্বপদ আ-কারান্ত ও পরপদ ই-
কারান্ত হয়। যেমন:
লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ= লাঠালাঠি;
পরস্পর গালি বর্ষণ করে যুদ্ধ = গালাগালি;
হেসে হেসে যে আলাপ = হাসাহাসি।
4. 4. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস :
যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের
ব্যাখ্যানমূলক মধ্যপদের লোপ হয়
তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বা
ব্যাখ্যাত্নক বহুব্রীহি বলে। এই
সমাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বে উপমান
পদ থেকে তুলনা বোঝায়
বলে একে উপমাত্মক বহুব্রীহি ও বলে।
যেমন: মৃগের নয়নের ন্যায় চঞ্চল নয়ন যার
= মৃগনয়না; চন্দ্রের মতো স্নিগ্ধোজ্জ্বল
মুখ যে নারীর = চন্দ্রমুখী; বিম্বের
মতো রঞ্জিত অধর যার = বিম্বাধর
ইত্যাদি।
5. 5. নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস : নঞর্থক
অব্যয় পদের সাথে বিশেষ্য পদের
বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে নঞর্থক
বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: নাই উপায়
যার = নিরুপায়; নাই অন্ন যার= নিরন্ন;
নাই তার যার = বেতার; নাই হুঁশ যার=
বেহুঁশ ইত্যাদি।
6. 6. অলুক বহুব্রীহি সমাস :
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের
বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক
বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। যেমন; গায়েহলুদ =
গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে;
হাতেখড়ি = হাতেখড়ি দেওয়া হয়
যে অনুষ্ঠানে ।
7. 7. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস :
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক
হয়, তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়।
যেমন : দশ আনন যার = দশানন, দশ ভুজ
(হাত) যার = দশ ভুজা ।
8. 8. সহার্থক বহুব্রীহি সমাস : সহার্থক
পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাস
হলে তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন: বান্ধবের সহিত বর্তমান = সবান্ধব,
স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক ইত্যাদি।
9. 9. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস :
যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও
ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয়
প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি। যেমন: এক
দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার =একচোখা (চোখ
+আ), ঘরের দিকে মুখ যার =ঘরমুখো (মুখ
+ও), ঊন পাঁজুর যার = ঊনপাঁজুরে (পাঁজুর
+এ) ইত্যাদি।
0. 10. নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস :
যে বহুব্রীহি সমাস কোন নিয়মের
অধীনে নয় তাকে নিপাতনে সিদ্ধ
বহুব্রীহি বলা হয়। যেমন : দুদিকে অপ
যার=দ্বীপ, অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ
ইত্যাদি।
বহুব্রীহি সমাসের অতিরিক্ত উদাহরণ:
মন্দভাগ্য = মন্দভাগ্য যার
বিগতপ্রাণ = গত প্রাণ যার
উচ্চশির = উঁচু শির যার কদাকার =
কদ (মন্দ) আকার যার
পুণ্যাত্মা = পুণ্য আত্মা যার
পোড়াকপাল = পোড়া কপাল যার
নীলাম্বর = নীল অম্বর যার
বদমেজাজী = বদ মেজাজ যার
কানকাটা = কান কাটা যার
ন্যায়নিষ্ঠ = ন্যায় নিষ্ঠ যে
বীণাপাণি = বীণা পাণিতে যার
খড়গহস্ত = খড়গ হস্তে যার
এলোকেশী = এলো কেশী যে
বিপত্নীক = পত্নী বিগত যার
ঊর্ণনাভ = ঊর্ণ নাভিতে যার চন্দ্রচূড়
= চন্দ্র চূড়ায় যাহার
যুবজানি = যুবতী জায়া (স্ত্রী) যার
রত্নখচিত = রত্ন খচিত যাতে
স্বল্পায়ু = স্বল্প আয়ু যার
হতভাগ্য = হত ভাগ্য যার
নতশির = নত শির যার নীলকণ্ঠ =
নীল কণ্ঠ যার
পূর্ণবয়স্ক = পূর্ণ বয়স যার গৌরাঙ্গ
= গৌর অঙ্গ যার
মতিচ্ছন্ন = মতি ছন্ন যার
রাশভারি = রাশ ভারি যার
শূলপাণি = শূল পাণিতে যার নদীমাতৃক
= নদী মাতা যার
কমলমুখ = কমল মুখে যার রত্নগর্ভা =
রত্ন গর্ভ যার
ভার্যাপ্রিয় = ভার্যা প্রিয় যার
সতীর্থ = সমান তীর্থ যার
বিশালাক্ষ = বিশাল অক্ষি যার সলজ্জ
= লজ্জার সাথে বর্তমান
সপরিবার = পরিবারের সাথে বর্তমান
কানাকানি = কানে কানে যে কথা
হাতাহাতি = হাতে হাতে যে লড়াই
চোখাচোখি = চোখে চোখে যে দেখা
মাতামাতি = মেতে মেতে যে আনন্দ
বেতার = তার নাই যার
বেহিসাবী = হিসাব নেই যার অপয়া =
পয় নেই যার
বেআব্রু = আব্রু নেই যার অবোধ =
বোধ নেই যার
একমণে = এক মণ ওজন যার চতুষ্কোণ =
চার কোন যার
দশগজি = দশগজ পরিমাণ যার চৌচালা =
চৌচালা আছে যার
আয়তলোচন = আয়ত লোচন যার গজানন =
গজের ন্যায় আনন যার
মীনাক্ষি = মীনের ন্যায় অক্ষি যার
হাতেখড়ি = হাতে খড়ি দেয়া হয়
যে অনুষ্ঠানে
গায়ে হলুদ = গায়ে হলুদ দেয়া হয়
যে অনুষ্ঠানে চুলাচলি = চুলে চুলে যে লড়াই
গলাগলি = গলে গলে যে ভাব
দলাদলি = দলে দলে বিভক্তি
তর্কাতর্কি = তর্কে তর্কে যে লড়াই
বেয়াদব =- আদব নেই যার
নির্মম = মমতা নেই যার অনন্ত =
অন্ত নেই যার
নির্লজ্জ = লজ্জা নেই যার
নিষ্ককলঙ্ক = কলঙ্ক নেই যার
অনুসূয়া = নেই অসূয়া (ঈর্ষা) দুপেয়ে =
দু পায়া যার
শতমূলী = শতমূল যার পঞ্চানন =
পঞ্চ আনন যার
ক্ষুরধারা = ক্ষুরের মতো ধার যা
বিশগজি = বিশ গজ পরিমাণ যার
সবান্ধব = বান্ধবের সাথে বর্তমান সজল
= জলের সাথে বর্তমান
সফল = ফসলসহ বর্তমান যে সভক্তি =
ভক্তি সাথে বর্তমান
সুপ্সুপা সমাস
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে তৎসম শব্দের পূর্বপদটির
নিপাত হলে তাকে সুপ্সুপা সমাস বলে। এ
সমাস তাই সপ্তমী তৎপুরুষের বৈচিত্র্য।
যেমন : পূর্বে অজ্ঞাত = অজ্ঞাতপূর্ব,
পূর্বে অদৃষ্ট = অদৃষ্টপূর্ব, পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব,
পূর্বে অশ্রুত = অশ্রূতপূর্বে, পূর্বে শ্রুত =
শ্রুতপূর্ব।

1 টি মন্তব্য: